সাতচল্লিশে দেশবিভাগের এক বছরের মধ্যেই বাঙালি জাতি ভাষার স্বাধিকার আন্দোলনে নেমেছিল। বায়ান্ন সালে মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সংরক্ষণের জন্য এ জাতির বীরসন্তানেরা জীবন উৎসর্গ করেন। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মহান মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই জাতির প্রকৃত ভিত্তিসূত্র বাংলা ভাষা। ‘একুশ’-এর সূত্র ধরে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা এবং বাঙালি জাতিকে গৌরবান্বিত করার শ্রেষ্ঠ সন্তানের নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বাংলা ভাষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র সফলভাবে মোকাবিলা করা শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম সাফল্য।

ঐতিহাসিকভাবে বাংলা যেমন শোষিত শ্রেণির ভাষা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনও শোষিত শ্রেণির মুক্তির জন্য লড়াই-সংগ্রাম করা। সেই অর্থেও বঙ্গবন্ধু, বাংলা ভাষা ও বাঙালির আন্দোলন একই সূত্রে গাঁথা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের আগেও যুগে যুগে বাংলা ভাষা নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হয়েছে। তেরো শতকে তুর্কি, এর কিছুকাল পর পর্তুগিজ, ষোড়শ-সতেরো শতকে ফরাসি, আঠারো শতকে ইংরেজি ভাষীরা বাংলার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ও গোপনে ষড়যন্ত্র করেছে- শত্রুতায় লিপ্ত হয়েছে। বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে।

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা, বাঙালি জাতীয়তার চেতনাকে ধ্বংস করার নীল নকশার অংশ হিসেবে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়কর্মী হিসেবে বাংলার জনগণের কাছে পরিচিতি লাভ করা তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর প্রতিরোধ আন্দোলনের ডাক দেন। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা এবং বাঙালি ছাত্রসমাজকে দেশপ্রেমের চেতনায় শানিত করার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।

 

 

কলমকথা/ বিথী